কতগুলো ভেষজ উদ্ভিদের ওষুধি পাতার মধ্যে একটি হচ্ছে পাথরকুচি।আমরা অনেকেই এটির নানা রকম গুণের কারণেই চিনে থাকি।এই আর্টিকেলে আমি এই পাতার বেশ কিছু গুণাবলির কথা ও এটা কি অপকার করতে পারে, তাই নিয়ে লিখবো।
এটি হলো বর্তমানে একটি বিরল প্রজাতির গাছ বা উদ্ভিদ।তবে এই ঔষুধি গাছটি খুব সহজেই চেনা যায় এবং তেমন কোনো বিশেষ যত্ন ছাড়াই বাড়ির আঙিনায় অথবা পুকুর পাড়েও জন্মগ্রহণ করে বৃদ্ধি লাভ করে।এছাড়া পাতার মাধ্যমেই নিজের বংশবৃদ্ধি করতে সক্ষম এ উদ্ভিদটি।অর্থাৎ গাছের অংশ কাণ্ড, মূল কিংবা বাকল নয় কেবল পাতা দ্বারা নতুন উদ্ভিদের সৃষ্টি ঘটায়। Kalanchoe pinnata Pers হচ্ছে গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম।অনেকে পাথরকুচির উদ্ভিদটি বাড়ির পাশের সৌন্দর্য দেখাতে লাগায় কিংবা বাগানের শখে।আবার কেউ কেউ দেখা যায়, গাছটি বিভিন্ন ঔষধ হিসেবে কাজ করে এজন্য লাগিয়ে সুস্বাস্থ্য পেতে চায়।
সাধারণত প্রায় তিন বা দেড় ফুট উঁচু হতে পারে এগাছটি।আশেপাশে পাতা রোপণ অথবা ঝোপঝাড়ে কিংবা বাড়ির কাছাকাছিতে এউদ্ভিদ জন্মায়।মূলত এর পাতা হতেই সৃষ্ট হয় অপর গাছের।এর পাতাগুলো এক প্রকারের খাঁজ থাকে, যা সংখ্যায় অনেক, পুরো আকৃতির হয়।এছাড়া মসৃণ, ডিমের আকারের ও মাংসল আকৃতি বিশিষ্ট্য।খাঁজগুলি ছোট আকৃতির হয়ে থাকে, আর পরিপূর্ণ বয়সে ঐ খাঁজ হতেই ছোট্ট চারা গাছের উৎপত্তি হয়।পাতা মাটিতে একটু আলগা করে রেখে দিলে বা ফেলে রাখলেই খুব বেশি পরিচর্যা ছাড়াই গাছ হয়ে বাড়তে থাকে।
কিভাবে খাওয়া উচিত পাথরকুচির পাতা?
দেহে ক্ষত হলে কিংবা আপনার কোথাও শরীরে আঘাত পেলে সেখানে কয়েকটি পাতা বেঁটে বা হাত দিয়ে ঢলে একটু রস বের করে লাগাতে পারেন।আবার অনেকেই আছে যারা এগুলো ভিজিয়ে রস তৈরি করে।আপনিও চাইলে নিয়মিত দুই চা চামচ রস খেতে পারবেন।এছাড়া ওষুধ হিসেবে হোমিওপ্যাথির ঔষধ কিনেও খাওয়া যাবে।
কী কী অপকারিতা রয়েছেঃ
শুরুতেই পাথরকুচির অপকার সম্পর্কে লিখছি।সকল ভেষজ উদ্ভিদের যেমন উপকার রয়েছে তেমনি অতিরিক্ত মাত্রায় ব্যবহার অথবা খেলে অপকারিতার সম্ভাবনাও আছে।তাই অতিরিক্ত পাথরকুচির পাতার রস খেলে আমাদের দেহে কিছু সমস্যা লক্ষণীয়।যথাঃ
১. ক্ষুধা না লাগা বা কম করে খাবার খাওয়া।
২. ডায়রিয়ার মতো পেটের পীড়া হওয়া।
৩. পিত্তথলিসহ পেটে নানান রোগ বা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
৪. মুখের রুচি কমে গিয়ে বিস্বাদ হতে পারে।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতাঃ
ভেষজ গাছটি উপরোক্ত কয়েকটি সমস্যার কারণ হলেও মানুষের দেহের বিভিন্ন উপকার করে থাকে, ওষধি উদ্ভিদ হিসেবে।যেমনঃ
দেহের আঘাত প্রাপ্ত অংশে ব্যথা রোধ করতেঃ আমাদের শরীরের কোনো স্থান থেকে রক্ত বের হলে সেখানে এপাতার রস দিলে, খুব তাড়াতাড়ি সহজেই রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যাবে।আবার আঘাত পেলে উক্ত জায়গায় বেটেও দেয়া যাবে।
খোঁস পাচড়া দূরীকরণেঃ ফুসকুড়ি, ছোট আকারের খোঁস পাচড়া, এলার্জির মতো রোগ প্রভৃতি প্রতিরোধ করতে প্রতিদিন নিয়ম করে এর রস খেতে পারেন।আর যদি কারো দেহে খোঁস পাচড়া বা ছোট মতো ফুসকুড়ি কিংবা ফোড়া হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে পাতার রস বেঁটে দিন।
পেট ব্যথা ভালো হয়ঃ
ছোট বাচ্চাদের পেটের পীড়া অথবা প্রাপ্ত বয়স্কের হঠাৎ এসিডিটির জন্যে পেট ব্যথা হলে রস খাওয়া উচিত।এতে করে দ্রুত সমস্যার সমাধান ঘটে এবং পেটের পীড়া থেকে মুক্তি মিলবে।নিয়মিত পাতাটির রস পানে অর্শ বা পাইলসের মতো রোগ থেকে ধীরে ধীরে রেহায় পাওয়া যেতে পারে।এছাড়াও আমাদের পাকস্থলী বা পিত্তথলীর বিভিন্ন সমস্যা যদি ভোগে থাকে তবে সেগুলো থেকেও মুক্তি পাওয়া যায় এপাতার সহায়তায়।
পাথরকুচি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা জানুন
ঠান্ডা প্রতিরোধ করতেঃ দ্রুত জ্বর বা ঠাণ্ডার মতো অসুখ থেকে সুস্থ্যতা পেতে হলে আপনাকে পান করতে হবে প্রতিদিন অথবা নিয়মিত পাথরকুচির পাতার রস।শিশুদের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগলে একাজটি ভালো উপকার দিবে এবং দ্রুত অসুস্থ্যতা সেরে যাবে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও ত্বকের উজ্জ্বলতাঃ
আমাদের দেহের ত্বক এর কোনো কালো দাগ অথবা মুখের মাঝে কালো স্পট থাকলে তা দূর করতে সাহায্যে করবে।তাই আমরা এর রস মুখে মাখতে পারি কোনো প্রকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়াই।আর বয়স বৃদ্ধি পেলে মানবদেহের নানা রকম সমস্যার ফলে আমাদের রক্তচাপ কখনো কমে যেতে পারে কিংবা অতিরিক্ত বেড়ে যায়, দুটায় হচ্ছে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।নিয়মিত পাথরকুচির রস পান করার ফলে এই রক্তচাপ ক্রমান্বয়ে আবার নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
অর্থাৎ এই ভেষজ উদ্ভিদটি বিভিন্ন সমস্যা ও রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করতে পারে।আশা করি, উপকার ও অপকারিতাগুলো তুলে ধরতে পেরেছি।আগামীতে নতুন আর্টিকেলে দেখা হবে।আজকের পোস্টের সমাপ্ত এখানেই।